কোরিয়ান ফল পর্ব ১

ফল নিয়ে আমাদের সবার আগ্রহ থাকে। আমরা যেমন বিভিন্ন ঋতুতে বিভিন্ন ধরনের ফল খেয়ে থাকি। তেমনি কোরিয়ানরা বিভিন্ন ঋতু বা বিভিন্ন সময়ে নানান রকমের ফল খেয়ে থাকেন। এরকমই ৪২টি ফলের তালিকা করেছি, যার মধ্যে প্রথম পর্বে ১০টি ফলের নাম ও সংক্ষিপ্ত বিবরণী আলোচনা করা হলোঃ
১. 사과 (ছাগোয়া) আপেল:
আপেলকে কোরিয়ানরা ছাগোয়া বলে থাকে। কোরিয়ানরা বিভিন্ন ধরনের আপেল চাষ করে থাকেন এবং তাদের আপেলের আকৃতিও বড় প্রকৃতির। কোরিয়ায় ফুজি আপেল এবং হংগো আপেল সবচেয়ে জনপ্রিয়। সাধারণত শরৎকাল ও শীতকাল(সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর) আপেলের মৌসুম। কোরিয়ান আপেল মিষ্টি ও তেঁতো ছাড়াও আরও বিভিন্ন স্বাদের হয়ে থাকে। আপেল তাজা, পাই, জুস, সস ও সিডার হিসেবে ব্যবহার হয়ে থাকে। কোরিয়ান আপেল উচ্চমানের হওয়ায় অনেক দেশে রপ্তানি করা হয়ে থাকে। কোরিয়ানরা আপেলকে শুভ ও সৌভাগ্যের প্রতীক হিসেবে দেখে।
২. 배 (ফ্যা) নাশপাতি:
নাশপাতিকে কোরিয়ানরা ফ্যা নামে ডেকে থাকেন। আপেলের মত কোরিয়ান নাশপাতিও আরেকটি রপ্তানিযোগ্য ফল। কোরিয়ান নাশপাতি বেশ বড় আকারের হয়। স্বাদে বেশ মিষ্টি ও রসালো হয়ে থাকে। কোরিয়ান নাশপাতির মৌসুম সাধারণত গ্রীষ্মের শেষ থেকে শরৎকাল (আগস্ট থেকে অক্টোবর) পর্যন্ত স্থায়ী থাকে। ফ্যা তাজা খাওয়া যায়। আবার সালাদ ও ডেজার্ট এবং বারবিকিউর মেরিনেড তৈরিতে ব্যবহার করে থাকে এছাড়া কোরিয়ানরা অনেক ঐতিহ্যবাহী খাবারে নাশপাতির রস প্রাকৃতিক মিষ্টি হিসেবে ব্যবহৃত করে। উপহার হিসেবে দেওয়ার জন্য এই ফলটি খুব জনপ্রিয় একটি ফল। কোরিয়ান উৎসব ও ছুটির সময়ে, বিশেষ করে ছুসক (추석) উৎসবে নাশপাতি ফলের ব্যাপক চাহিদা থাকে।
৩. 포도 (ফোদো) আঙুর:
আঙুরকে কোরিয়ানরা ফোদো বলে থাকেন। কোরিয়ায় বিভিন্ন ধরনের আঙ্গুর চাষ করা হয়ে থাকে। আঙুর গ্রীষ্মকাল ও শরৎকালেও পাওয়া যায়। তাই মাসের হিসেবে আগস্ট থেকে অক্টোবর পর্যন্ত এভেইলেভেল থাকে। ক্যাম্পবেল আর্লি, শাইন মুসক্যাট ও কনকর্ড জাতের আঙুর খুব জনপ্রিয়। আঙু্রের স্বাদ সাধারণত মিষ্টি ও তেঁতো হয়ে থাকে। আঙুর তাজা খাওয়ার পাশাপাশি আঙুরের রস ও ওয়াইন তৈরি করেও খেয়ে থাকেন। আঙুর থেকে তৈরি করা হয়ে থাকে কোরিয়ান ওয়াইন 매실주 (মেছিলজু) এবং অন্যান্য জনপ্রিয় পানীয়। কোরিয়ায় আঙুর উপহার হিসেবে দেওয়াটা একটি জনপ্রিয় সংস্কৃতি।
৪. 딸기 (তালগি) স্ট্রবেরি:
কোরিয়ানরা স্ট্রবেরিকে তালগি বলে থাকেন। স্টবেরী শীতকাল ও বসন্তকালের একটি ফল। সাধারণত ডিসেম্বর থেকে মে পর্যন্ত মার্কেটে এভেইলেভেল থাকে। কোরিয়ান স্টবেরী খুবই মিষ্টি আর রসালো হয়ে থাকে। যেকোনো কেক, জ্যাম বা জেলি এবং ডেজার্টে স্টবেরীর বহুল ব্যবহার দেখা যায়। কোরিয়ায় স্টবেরী গ্রিনহাউসে চাষ করা হয়, তাই শীতকালেও উচ্চ মানের স্টবেরী পাওয়া যায়। কোরিয়ায় স্টবেরী খুব জনপ্রিয় একটি ফল এবং প্রায়ই উপহার হিসাবে দেওয়া হয়। বিশেষ করে নববর্ষ এবং ভালোবাসা দিবসে ডেজার্ট হিসাবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
৫. 수박 (ছুবাক) তরমুজ:
কোরিয়ায় তরমুজকে ছুবাক ডাকা হয়। এটি একটি গ্রীষ্মকালীন ফল। সাধারণত জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত মার্কেটে সহজলভ্য থাকে। আমাদের বাংলাদেশের মতই কোরিয়ান তরমুজও বেশ বড় আকৃতির হয়। দেখতে সবুজ রঙের, কিন্তু ভেতরটা লাল টুকটুকে হয়। খেতে বেশ রসালো ও মিষ্টি। পৃথিবীর সব দেশেই গরমের সময়ে প্রচণ্ড তৃষ্ণা নিবারক হিসেবে তরমুজের নাম সুপরিচিত।
৬. 참외 (ছামোয়ে) কোরিয়ান মেলন:
ছামোয়ে একটি কোরিয়ান মেলন। দেখতে ছোট, ডিম্বাকৃতি ফল, যার বাহিরের রং হলুদ এবং সাদা ডোরাকাটা থাকে। ভেতরের অংশ সাদা বা হালকা সবুজ রঙের হয়। এটিও গ্রীষ্মকালীন ফল। মে থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই ফলটি হাতের নাগালে পাওয়া যায়। কোরিয়ায় এই ফলটির জনপ্রিয়তা ঈর্ষণীয়। ফলটির স্বাদ বেশ মিষ্টি এবং ঘ্রান খুবই মনোমুগ্ধকর। এ ফলটি আবার সঙ্কুচিত হয়ে যায়। ছামোয়ে চাইলে ভাজি করেও খাওয়া যায়। এটি কোরিয়ার ঐতিহ্যবাহী ফলগুলির মধ্যে একটি।
৭. 멜론 (মেল্লোন) চেরোকি মেলন:
কোরিয়ায় বিভিন্ন ধরনের মেলন চাষ করা হয়। যার মধ্যে চেরোকি মেলন উল্লেখযোগ্য। মেলোন মাঝারি আকৃতির গোলাকার একটি ফল। বাহিরের অংশ সবুজাভ বা হলুদাভ রঙের এবং ভেতরের অংশ কমলা বা সবুজ রঙের হয়। সাধারণত জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তরমুজ পাওয়া যায়। এটি খুব মিষ্টি ও রসালো হয়। মেলোন তাজা খাওয়ার পাশাপাশি স্মুদি ও ডেজার্টেও ব্যবহার হয়ে থাকে। উপহার দেওয়ার জন্য খুবই জনপ্রিয় আরেকটি ফল।
৮. 감 (খাম) পার্সিমন:
পার্সিমনকে কোরিয়ায় খাম নামে পরিচিত। বাংলাদেশে পার্সিমন তেমন পরিচিত নয়। কিন্তু কোরিয়ায় খাম খুবই জনপ্রিয় একটি ফল। খাম কোরিয়ার একটি শরৎকালীন ফল। সাধারণত সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত মার্কেটে থাকে। খাম খেতে বেশ মিষ্টি ও মোলায়েম। তাজা খাওয়া যায়। আবার শুকিয়েও খাওয়া যায়। শুকিয়ে খাওয়ার প্রসেসটাকে 'খোতগাম' (곶감) বলে।
৯. 자두 (ঝাদু) বরই:
বরই আমাদের দেশের শীতকালের ফল হলেও কোরিয়ায় কিন্তু গ্রীষ্মকালের ফল এবং সবচেয়ে জনপ্রিয় ফলের মধ্যে অন্যতম। এই বরই-কে কোরিয়ানরা ঝাদু নামে ডাকেন। তাদের দেশে বরই জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত পাওয়া যায়। সব দেশেই বরই মিষ্টি এবং টক স্বাদের ফল। কোরিয়ানরা বরই তাজা, শুকিয়ে এবং জ্যাম, জেলি, ডেজার্টে খেয়ে থাকেন।
১০. 복숭아 (ফোকসুংয়া) পিছ:
পিছ আমাদের দেশে মোটামুটি পরিচিত ফল। এই ফলটিকে কোরিয়ানরা ফোকসুংয়া নামে ডেকে থাকেন। ফোকসুংয়া একটি গ্রীষ্মকালীন ফল। সাধারণত জুলাই থেকে আগস্ট পর্যন্ত সহজলভ্য থাকে। ফোকসুংয়া খেতে অত্যন্ত মিষ্টি ও রসালো হয়। সাধারণত তাজা খাওয়া হয়, আবার জ্যাম ও পানীয় তৈরিতেও ব্যবহৃত হয়।